অম্বিকা কালনা
AMBIKA KALNA
23/10/2017
কালনা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি পৌর অঞ্চল। ০৬/০৯/২০১৭ তে যখন গুপ্তিপাড়া ঘুরতে গেছিলাম তখন আমাকে অনেকজন বলেছিল অন্তত একবার হলেও অম্বিকা কালনা ঘুরে আসতে। শিল্পী ও তার শিল্প দর্শনই আমার মন্দির, মসজিদ, গির্জা ঘোরার অন্যতম লক্ষ্য থাকে। সেই উদ্দেশ্যেই কালনা দর্শনে বেরিয়ে পড়া। এবং এই প্রথমবার আমি একা কোনো Trip করলাম। সেই দিক থেকেও এই Trip টা আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
যাই হোক, সকাল ৭:৫৭ তে হাওড়া-কাটোয়া লোকাল ধরে আমার কালনা যাত্রা শুরু।৭:৫৭ র ট্রেন ছাড়ল ৮:০৫ এ। দীর্ঘ দু-ঘন্টা ট্রেনের মধ্যে ঠেলাঠেলি,লাথালাথির মতো মহান কাজ সেরে ১০:০৫ এ আমি কালনা নামলাম। স্টেশন থেকে ১০ টাকা ভাড়ায় টোটো ধরে গেলাম ১০৮ শিব মন্দিরের কাছে।টোটো ওলার মোবাইল নং ও চেয়ে নিলাম ভবিষ্যতে দরকার লাগতে পারে ভেবে।
টো টো থেকে নেমে আমি প্রথমে গেলাম কালনা টেম্পল কমপ্লেক্সের ভিতর।এবং ভিতরে ঢুকেই বাঁ দিকে যে অপূর্ব সুন্দর মন্দিরটি দেখলাম সেটির নাম হলো প্রতাপেশ্বর মন্দির। মন্দিরের টেরাকোটার কাজ দেখার মতো।এই মন্দিরের ঠিক পাশেই রয়েছে রাসমঞ্চ।যেটি সন্ধ্যা বেলায় অসাধারণ রূপ ধারণ করে।রাসমঞ্চ ছেড়ে একদম সোজা গেলেই পড়বে লালজীর মন্দির।লালজীর মন্দির চত্বরে আরও দুটি মন্দির আছে।প্রথমেই যে মন্দিরটি আছে তার নাম হলো গোবর্ধন মন্দির (গিরিগোবর্ধন)।তার পাশেরটির নাম নাথ মন্দির।এবং একদম শেষ মন্দিরটি হলো লালজীর মন্দির।এই তথ্যটি আমি পেয়েছি লালজীর মন্দিরে পূজো দিতে আসা একজনের থেকে। অনেক অনুরোধ করার পর ওনার একটা ছবি তুলতে পারলাম।মন্দির চত্বরে জল ঢুকে পড়ার কারণে নাথ মন্দিরের ভিতরে ঢোকা সম্ভবপর হয়নি।
এরপর লালজীর মন্দিরের বাইরে এসে পঞ্চরত্ন মন্দিরের ছবি তুলে ঢুকলাম কালনা টেম্পল কমপ্লেক্সের শেষ মন্দির চত্বর কৃষ্ণচন্দ্রজী মন্দির চত্বরে।এখানে কৃষ্ণচন্দ্রজী মন্দির ছাড়াও আরও যে মন্দিরগুলি আছে সেগুলি হলো বিজয়-বৈদ্যনাথ মন্দির,রাম-সীতা মন্দির এবং বদ্রীনারায়ণ মন্দির।
সব মন্দির দেখা শেষে সকাল ১১:০৫ নাগাদ আমি গেলাম টেম্পল কমপ্লেক্সের বিপরীতে থাকা কালনার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মন্দির ১০৮ শিব মন্দির দর্শনে। সত্যি কথা বলতে এতগুলো শিব মন্দির দেখে আমি সত্যিই হতবাক হয়ে গেছিলাম।১৫ মিনিট মতো থেকে, ছবি তুলে আমি বেরিয়ে পড়লাম কালনার বাকি দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে।
কালনা টেম্পল কমপ্লেক্সের ঠিক পাশেই একটি মন্দির রয়েছে যেটির নাম উল্লেখ করা নেই ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ থেকে।তবে লোকমুখে জানলাম মন্দিরটির নাম রত্নেশ্বর মন্দির।তবে কেউই খুব একটা sure ছিল না।
যাইহোক ১০৮ শিব মন্দিরের পাশের রাস্তা ধরে ১০ মিনিট হাঁটার পর পেলাম কালনার অন্যতম বিখ্যাত মন্দির মহাপ্রভুর মন্দির।এই মন্দিরের ভিতরে ছবি তোলা নিষেধ।এই মন্দিরের ভিতরে পাঁচটি পাশাপাশি ঘরে বিরাজমান আছেন যথাক্রমে রাম-সীতা-লক্ষণ, জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা,নিতাই গৌর,রাধা-কৃষ্ণ এবং গৌরিদাস পন্ডিত। লোকমুখে জানলাম যে এটি গৌরিদাস পন্ডিতেরই বাড়ি।
এখান থেকে বেরিয়ে আমি গেলাম শ্যামসুন্দর মন্দিরে। এখানেও ছবি তোলা নিষেধ। এইখানেই রয়েছে নিত্যানন্দ প্রভুর বিবাহস্থান।
এইসব দেখে আমি গেলাম মহাপ্রভুর বিশ্রামস্থান অমলীতলা।বিরাট তেঁতুল গাছের তলায় যার অবস্থান। পরবর্তী দর্শনীয় স্থান দেখার আগে ১০ মিনিট এখানে বিশ্রাম নিয়ে তরতাজা হয়ে নিলাম।
১০ মিনিট অমলীতলায় বিশ্রাম নিয়ে হাঁটা দিলাম গোপালজী মন্দির দর্শনের জন্য। ৩৫ মিনিট হাঁটার পর আমি পৌঁছলাম ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দ্বারা সংরক্ষিত মন্দির গোপালজী মন্দিরে।এই মন্দিরে নিয়মিত পূজা হয়।এরই পাশাপাশি আমি দেখলাম যথাক্রমে সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি এবং অনন্ত বাসুদেব মন্দির। সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি আমি পৌঁছলাম দুপুর ১২:৩৫ নাগাদ। মন্দিরের দরজা ছিল বন্ধ। শুনলাম কিছুক্ষণ পরই ভোগ বিতরণ করা হবে। আমি ভোগের জন্য অপেক্ষা না করে পৌঁছে গেলাম পরবর্তী মন্দির অনন্ত বাসুদেব মন্দিরে। এইখানেও মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে গেছিল। কিছু ছবি তোলার পর টোটো রিক্সা ধরে আমি গেলাম NAM BRAMHO JIU MONDIR দর্শনে।এটি পাতাল গঙ্গা নামেও পরিচিত।
সব দেখা শেষে আমার ইচ্ছা হল পাথুরিয়া মহল ঘাট দেখার এবং হেঁটেই যাব ঠিক করলাম। কিন্তু আমার সাথে ঘটল একটি বাজে ঘটনা।যার ফলে আমি ঘাট না দেখেই চলে এসেছি। আমার এই অভিঞ্জতা আমি লুকিয়ে রাখতে চাইনা। NAM BRAMHO JIU MONDIR দেখে বেরিয়ে আমি গুগল ম্যাপ অনুযায়ী যেতে শুরু করলাম পাথুরিয়া মহল ঘাট। কিন্তু গুগল ম্যাপ আমায় এমন এক গলিতে ঢোকাল যেটি ছিল নিষিদ্ধ পল্লী(RED LIGHT AREA)। অনেক কষ্টে কোনোরকমে আমি সেই গলি পেরিয়ে সোজা হাঁটা দিলাম স্টেশন পথে। সত্যি কথা বলতে একটু ভয়ও পেয়েছিলাম। যাইহোক,৩০ মিনিটের হাঁটা পথে আমি এলাম রেল স্টেশনের কাছে একটি হোটেলে।তারপর দুপুরের খাওয়া সেরে ৩:১৫ নাগাদ স্টেশন এলাম এবং ৪:৪৫ এর কাটোয়া-হাওড়া লোকাল করে হাওড়া নামলাম সন্ধ্যা ৬:৫০ নাগাদ।এবং আমার কালনা দর্শন পূর্ণ হল।এই Trip টা আমাকে একা চলতে শেখার সাহস দিল ও অনেকগুলি নতুন অভিজ্ঞতাও হল আমার।
 |
অম্বিকা কালনা রেলওয়ে স্টেশন |
 |
প্রতাপেশ্বর মন্দির |
Awesome Photography.........
ReplyDeleteYou doing very nice job 👌👍👌👍👌👌
Continue......
thanks brother
DeleteSuperb bro...keep it up
ReplyDelete