Thursday 18 January 2018

চুঁচুড়া ও হুগলি ইমামবাড়া (Chuchura & Hooghly Imambara)

চুঁচুড়া ও হুগলি ইমামবাড়া  Chuchura & Hooghly Imambara (18/11/2017)



চুঁচুড়া, হুগলি চকবাজার ও বাশঁবেড়িয়া(অনিবার্য কারণবশত বাঁশবেড়িয়া যাওয়া হয়নি) - আজকের গন্তব্যস্থল এবং নানা ঘটনার সাক্ষী আমার এই ছোট্ট সফরটি। আমার এই সফরের সঙ্গী ছিল আমার অত্যন্ত প্রিয় বুকান চ্যাটার্জী দাদা। আমাদের ঘোরার বর্ণনা দেবার আগে হুগলি জেলার অন্তর্গত এই চুঁচুড়া শহরটি সম্বন্ধে কিছু কথা বলি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা হল চুঁচুড়া। চুঁচুড়ার থেকে চুঁচড়ো নামটিই চলে কথ্য ভাষায়। এটি হুগলি জেলার সদর দপ্তর। হুগলি ও চুঁচুড়ার ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় যে হুগলি শহরটি ছিল পর্তুগিজ দের অধীনে এবং চুঁচুড়া ছিল ওলন্দাজ দের অধীনে। অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এই দুই শহর‌ই দখল করে ও পরে ১৮৬৫ সালে এই দুই প্রশাসনিক অঞ্চল কে এক করা হয়।
দুপুর ১২:৫৫, হাওড়া স্টেশন থেকে ব্যান্ডেল লোকালে চড়ে বসলাম আমি আর বুকান দা। এক ঘন্টার কাছাকাছি রাস্তা। ট্রেন ছাড়ল ১ বেজে ৫ মিনিট নাগাদ। বুকান দার সাথে আমি একটু বেশিই বকবক করি। যার ফলে আমরা কখন চুঁচুড়া স্টেশনের কাছে চলে এলাম তার খেয়ালই ছিল না। আমার মোবাইলে থাকা রেলের application টি না জানালে হয়ত আমি জানতেও পারতাম না। যাই হোক, যখন আমরা চুঁচুড়া স্টেশনে নামলাম তখন সময় হয়েছিল ১:৫২। স্টেশনের বাইরে থেকে ১৫ টাকা ভাড়ায় টোটো রিক্সা ধরে সোজা চলে গেলাম আমাদের প্রথম গন্তব্যস্থল আর্মেনিয়ান চার্চ দর্শনে। আগেই বলেছি আমাদের এই ছোট্ট সফরটি ছিল নানা ঘটনায় ভরপুর। এর মধ্যে প্রথম ঘটনাটি হল আর্মেনিয়ান চার্চে ঢুকতে না পারা। স্টেশন থেকে চার্চ টোটো রিক্সা তে ১৫ মিনিট। আমরা চার্চের সামনে এসে দেখি চার্চের প্রধান দরজা ভেতর থেকে তালা দেওয়া। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর চার্চের সিকিউরিটি গার্ড দরজা খুলল বটে কিন্তু আমরা ঢুকতে পারলাম না। আমাদের জানানো হল যে কলকাতার বড়বাজার থেকে আগে চার্চ ঘোরার অনুমতি পত্র নিয়ে আসতে হবে তারপর‌ই আমরা চার্চ ঘুরতে পারব। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও যখন আমাদের ঢুকতে দেওয়া হল না তখন চার্চের বাইরের অংশের‌ই কিছু ছবি তুললাম। চার্চের ইতিহাস ঘাটলে জানতে পারি চুঁচুড়ার শেষ ডাচ্ গভর্নর ড্যানিয়েল অ্যান্টনি ওভারবেক এই চার্চের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে সোফিয়া বাগ্ৰামের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং তার স্বামীর স্মরণে এই চার্চের সুউচ্চ চূড়াটি নির্মাণ করেন। যা এখনও বর্তমান।
যাইহোক,আমরা এবার বেরিয়ে পড়লাম পরবর্তী গন্তব্যস্থল Dutch Cemetery বা ওলন্দাজ কবরস্থান বা গোরস্থান দেখবার ‌উদ্দ্যেশ্যে। এপ্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি চুঁচুড়ায় Dutch Cemetery 'গোরস্থান' নামেই সকলের কাছে অধিক পরিচিত। চার্চ থেকে ২২ মিনিটের হাঁটা পথে চুঁচুড়া শহরের মধ্যস্থল ঘড়ির মোড় পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম গোরস্থানে। কলকাতার south park street cemetery তে ঢুকতে যেখানে টিকিট কাটতে হয় সেখানে এই ওলন্দাজ কবরস্থানটিতে ঢুকতে কোনো টিকিট কাটতে হয় না। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব জায়গাটিকে অধিগ্ৰহণ করলেও একপ্রকার অনাদরেই আছে এই ঐতিহাসিক স্থানটি। তবে আমার ঘোরা cemetery গুলোর মধ্যে এই dutch cemetery টি অনেক বেশি গোছানো ও সুন্দর। এই ওলন্দাজ কবরস্থানটিতে আছে ৪৫ টি ডাচ্ কবর। এটি ১৮-১৯ শতাব্দীতে খুবই সক্রিয় ছিল। এখানে সবচেয়ে প্রাচীন সমাধিটি স্যার কর্নেলিয়াশ জঙ্গের, যিনি ১৭৪৩ খ্রিষ্টাব্দে চুঁচুড়ায় মারা যান। আমরা এখানে ৩৫ মিনিট এর‌ও বেশি সময় মতো থেকে, ঘুরে ও ছবি তুলে বেরিয়ে পড়লাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্যস্থলের উদ্দ্যেশ্যে।
আমাদের পরবর্তী গন্তব্যস্থল ছিল ষন্ডেশ্বরতলা। ওলন্দাজ কবরস্থান থেকে বেরিয়ে তিন মাথার মোড়ে এসে এক ভদ্রলোক কে জিজ্ঞেস করলাম যে ষন্ডেশ্বরতলা কী হেঁটে যাওয়া যাবে? উনি বললেন , হেঁটে গেলে অনেকখানি রাস্তা। আপনারা বরং টোটো রিক্সা ধরে যান। ওনার কথামতো আমরা টোটো ধরলাম। টোটো চালক প্রথমে একটু ইতস্তত বোধ করছিল যাওয়া নিয়ে। কার্তিক ঠাকুর বিসর্জন হবে এই কারণে অনেক রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা কলকাতা থেকে ঘুরতে এসেছি জানতে পেরে তিনি যেতে রাজি হলেন। একটা শর্টকার্ট রাস্তা ধরে ১২ মিনিটের মধ্যে আমাদের মন্দিরের কাছাকাছি নামিয়ে দিলেন। ভাড়া নিলেন ১৫ টাকা। দত্ত ঘাটের কাছে ষন্ডেশ্বর মন্দির চত্বরে আছে সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির, বঙ্কুবিহারী মন্দির, যোগাদ্যা দূর্গা মাতার মন্দির ও নাট মন্দির। এছাড়া মন্দির গুলির পিছন দিকে ঘাটের কাছে আছে আরও কয়েকটি মন্দির। মন্দির চত্বর বেশ গোছানো। ষন্ডেশ্বরতলার মন্দির গুলির সময়সূচি ও নিয়মাবলীর একটি ছবিও আমি পোস্ট করলাম।
সময় ৩:৫৩। দুপুর শেষ হয়ে বিকেল শুরু এবং আর কিছুক্ষণ পর‌ই অন্ধকার নেমে আসবে। তাও আমরা বাঁশবেড়িয়ায় গিয়ে ঘুরব এবং ছবি তুলব এই প্রকার এক অসম্ভব আশায় মন্দির চত্বর থেকে বেরিয়ে রিক্সা ধরলাম। রিক্সা চালককে বলে দিলাম বাঁশবেড়িয়া যাবার অটো রিক্সা যেখান থেকে পাব সেখানে নামাবেন। ১০ টাকা ভাড়ায় তিনি আমাদের নামালেন চুঁচুড়া আদালতের কাছের অটো স্ট্যান্ডে। অটো তে উঠে আমরা র‌ওনা দিলাম বাঁশবেড়িয়ার পথে। যাওয়ার পথে যে জায়গাটা পড়ল সেটা উপেক্ষা করে বাঁশবেড়িয়া‌ ঘোরা আমাদের পক্ষে আর সম্ভবপর হল না। চকবাজার এলাকায় অবস্থিত হুগলি ইমামবাড়া। বুকান দা আর আমি ঠিক করলাম এটা দেখেই যাব। যা ভাবা তাই কাজ। ১২ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে আমরা নেমে পড়লাম। তারপর ৩-৪ মিনিটের হাঁটা পথে পৌঁছে গেলাম হুগলি ইমামবাড়া। ইমামবাড়া ঢুকতে ১০ টাকা মূল্যের একটি টিকিট কাটতে হয়। ইমামবাড়া ঢুকে বেশি সময় নষ্ট না করে আমি ছবি তুলতে শুরু করলাম। অবশ্য আমার আরও আগে বুকান দা শুরু করে দিয়েছিল ছবি তুলতে। ছবি তোলার মাঝেই আমরা ঢুকলাম মসজিদের ভিতর। ভেতরটা ছিল কোলাহল মুক্ত শান্ত একটা জায়গা। এরকম একটা জায়গা পেলে কেউই বেরিয়ে আসতে চাইবে না। আমাদের ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছিল। যাইহোক কিছুক্ষণ কাটিয়ে আমরা বাইরে বেরিয়ে এলাম কারণ মসজিদের দরজা খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হবে। ইমামবাড়ার দু-তলা তে আছে মাদ্রাসা। এর‌ই মধ্যে নির্দেশ এল ইমামবাড়া দেখার সময় শেষ। এবার গেট বন্ধ হবে। আমরা বেরিয়ে পড়লাম। সময় ৫:০৫। অন্ধকার হচ্ছে আস্তে আস্তে । সামনেই ছিল জুবিলী ব্রীজ। সেটির ছবি তোলার আশায় আমরা এগতে থাকলাম। কিন্তু ঘটল আর এক বিপত্তি। আমার সঙ্গী বুকান দা তার ব্যাগ ইমামবাড়া আসার অটো তে রেখে চলে এসেছে। ইমামবাড়া দেখার নেশায় এতটাই মেতে ছিলাম যে ব্যাগ নিতে ভুলে গেছি সে কথা কারুরই মনে ছিল না। আমরা সাথে সাথে টোটো রিক্সা ধরে সেই অটো স্ট্যান্ডের কাছে গেলাম বটে, কিন্তু অটো ওলা বা ব্যাগ দুটোর কোনটাই পেলাম না। শেষপর্যন্ত হতাশ হয়ে ব্যান্ডেল গামী অটোরিকশা তে চড়ে সন্ধ্যা ৬:৪০ নাগাদ ব্যান্ডেল স্টেশন পৌঁছে ৬:৪৫ এ হাওড়া যাবার একটি লোকাল করে আমরা বাড়ি ফিরলাম। অম্বিকা কালনা র মতো এই ছোট্ট সফরটিও অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে র‌ইল।
প্রধান দরজার পাশে থাকা আর্মেনিয়ান চার্চের ফলক।
প্রধান ফটক।
আর্মেনিয়ান চার্চ।
সোফিয়া বাগ্ৰামের পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত চার্চের সুউচ্চ চূড়া।
ঘড়ির মোড়।
চুঁচুড়া শহরের মধ্যস্থল।
ওলন্দাজ কবরস্থান
অন্দরমহল।
ওলন্দাজ কবরস্থান।
অন্দরমহল।
ওলন্দাজ কবরস্থান।
ষন্ডেশ্বরতলা মন্দিরে ঢোকার মুখে।
সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির
বঙ্কুবিহারী মন্দির
যোগাদ্যা দূর্গা মন্দির
নাট মন্দির।
ষন্ডেশ্বরতলা মন্দির।
ষন্ডেশ্বরতলা মন্দির গুলির সময়সূচি ও নিয়মাবলী।
ষন্ডেশ্বরতলা মন্দির (পিছনের দিক) 
দত্ত ঘাট।
ইমামবাড়া ঢোকার টিকিট।
ইমামবাড়া
হুগলি ইমামবাড়া। (Panorama view)
ইমামবাড়া









ALBUM -  CHUCHURA & HOOGHLY IMAMBARA
AKC PHOTOGRAPHY
DATE - 18/11/2017
DEVICE - LENOVO VIBE K5

Facebbok :-
https://www.facebook.com/ak.chatterjee.1485

Ambika Kalna Album(Facebook) :-
https://www.facebook.com/ak.chatterjee.1485/media_set?set=a.124634174964753.1073741868.100022545129761&type=3

Facebook Page :-
https://www.facebook.com/Photography.akc/

Instagram :-
https://www.instagram.com/1995akc/?hl=en

2 comments:

Sevoke & Kalijhora । Top 2 places visit in Siliguri,West Bengal । TRAVEL...

My Fourth YouTube and First Travel Video.....Pls Pls Pls SUBSCRIBE to my channel and hit the BELL icon to stay notified.....Hope you like...

BLOG ITEMS