Monday 6 August 2018

Sevoke & Kalijhora । Top 2 places visit in Siliguri,West Bengal । TRAVEL...



My Fourth YouTube and First Travel Video.....Pls Pls Pls SUBSCRIBE to my channel and hit the BELL icon to stay notified.....Hope you like this video....

সেভক ও কালিঝোড়া - শিলিগুড়ি ( SEVOKE & KALIJHORA - SILIGURI )

সত্যি ! মিলন হলো এতদিনে 🤗
১৮ দিন পর সবে টাইফয়েড সেরে উঠেছি। দেড় মাসের ওপর হয়ে গেছে কোথাও ঘুরতে যাইনি। মন খুবই উতলা হয়ে উঠেছিল। কিন্তু যাবোটা কোথায়? আর লং ট্রিপ নাকি আমার চিরাচরিত ডে ট্রিপেই যাব? লং ট্রিপ করার মতো টাকা নেই হাতে। আর তাছাড়া ২০১৭ সালের মালদা ট্রিপ ছাড়া আর কোনোরকম লং ট্রিপ করার অভিজ্ঞতাও ছিল না। এরকম একটা সময়ে ইউটিউব ঘাটতে ঘাটতে পেলাম একটি জায়গার হদিস। যেটি একদিনে ঘুরে আসা যাবে, ট্রেকিং এর একটা স্বাদ‌ও পাওয়া যাবে, একটা নতুন অচেনা জায়গায় প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো যাবে এবং আমার প্রেম পাহাড়ের সাথে প্রথমবারের মতো দেখাও হবে।
কমলা ফলস্ - শিলিগুড়ির কালিঝোড়া তে অবস্থিত একটি ছোট্ট অথচ সুন্দর ঝর্ণা। যেখানে মানুষের যাতায়াত কম। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য কে এত সামনে থেকে অনুভব করার এই সুযোগ টিকে ছাড়তে চাইনি। আর সঙ্গীর অভাব‌ও ছিল না। অনিশ কে বললাম আমার মনের কথা। অনিশ‌ও এককথায় রাজি।(প্রসঙ্গত : অনিশের বাড়ি শিলিগুড়িতে। আমার সাথে ওর আলাপ ফেসবুক থেকে। ওর সাথে আলাপের পর থেকেই আমার শিলিগুড়ি ঘোরার ইচ্ছা আর‌ও বেড়েছিল। আর সত্যি কথা বলতে অনিশ ছাড়া শিলিগুড়ি আমার মনের মতো করে ঘোরা সম্ভব হত না।) তাই আর সাত পাঁচ কিছু না ভেবে কমলা ফলস্ এর উদ্দেশ্যে শিলিগুড়ি যাব এই মনস্থির করলাম।
জুলাই,২৮ -
সকাল থেকে কিছুটা চিন্তিত আবার প্রথমবার উত্তরবঙ্গে যাওয়ার ভাবনায় অত্যন্ত আনন্দিত‌ও। চিন্তিত ছিলাম দুটি কারণে। এক, প্রথম বার শিলিগুড়ি যাচ্ছি, তাও মাত্র একদিনের জন্য। কীরকম ঘুরব সেই বিষয়ে। দুই, অনলাইনে কাটা ট্রেনের টিকিট টি এখন‌ও কনফার্ম হয়নি।
বিকালের পর অবশ্য আমার চিন্তা অনেক টাই গেল কমে। টিকিট কনফার্ম। চার্ট ও তৈরি। রাত সাড়ে আট টায় ট্রেন। ১৩১৪৯ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস। সন্ধ্যা ৭ টায় রেডি হয়ে আমার দুই সঙ্গী (ব্যাগ ও টুপি) কে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম শিয়ালদহ স্টেশন এর উদ্দেশ্যে।
স্টেশন যখন পৌছালাম তখন সময় সন্ধ্যা ৭:৪৫। হাতে অনেকটাই সময় ছিল। ভিডিও শ্যুট করতে থাকলাম। ওহঃ বলাই হয়নি। একটা নতুন ভিডিও ক্যামেরা কিনেছিলাম দু দিন আগেই। ট্রাভেল ভিডিও করার একটা সুপ্ত মনোবাসনা ছিল অনেকদিন থেকেই। অবশেষে সেই সুপ্ত মনোবাসনা গুপ্ত পথে পূরণ হল এই শিলিগুড়ি ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে। যাইহোক ট্রেন হাজির যথা সময়ে। সাড়ে এগারো ঘন্টার জার্নি। ট্রেন ছাড়ল ২০ মিনিট লেট করে।
রাত ৯:৪০ -
এত তাড়াতাড়ি ডিনার আমি শেষ কবে করেছি জানিনা। বাবার তৈরি করে দেওয়া চাউ খেয়ে নিলাম ঝটপট। তারপর শুধুই জানলার পাশে বসে অপেক্ষা।সেই অপেক্ষার ফাঁকেই যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়াল‌ই ছিল না।
জুলাই,২৯
ভোর ৫:৩৫ -
পেরোলাম ডালখোলা স্টেশন। ট্রেন প্রায় এক ঘন্টা লেটে চলছিল। আমি শুরু করে দিলাম আমার ভিডিও রেকর্ডিং এর কাজ। এর‌ই মাঝে একে একে পেরোলাম কিষাণগঞ্জ ও আলুবাড়ি রোড জংশন। এবার ঢোকার পালা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। নর্থ বেঙ্গলের গন্ধ পেতে শুরু করলাম। ট্রেনের জানালা থেকে দেখতে পেলাম অনেক চা বাগান। তার ভিডিও করতে থাকলাম।
সকাল ৮:১৪ -
পৌছালাম নিউ জলপাইগুড়ি জংশন। ট্রেন থেকে বেড়িয়ে একটু ঘুরে নিলাম স্টেশন চত্ত্বর। বা বলতে পারেন উওরবঙ্গকে অনুভব করার জন্য একটু বেড়িয়েছিলাম আর কি !
সকাল ৮:৪৫ -
পৌছালাম বহু প্রতীক্ষিত শিলিগুড়ি জংশনে। নেমেই ঘটল বিপত্তি। স্টেশনের ছবি তুলতে গিয়ে ধরা পড়লাম মামা(পুলিশ) দের হাতে।
-- তুমি জানো না স্টেশন চত্বরে ছবি তোলা নিষেধ?
-- সরি স্যার, আসলে প্রথমবার ট্রেনে ভ্রমণ তো তাই আর কি, ভুল হয়ে গেছে (প্রথম ঢপ)
-- ছবিটা এক্ষুনি ডিলিট করো।
-- হ্যাঁ স্যার ডিলিট করে দিয়েছি।(দ্বিতীয় ঢপ)
ছবি অবশ্য ডিলিট করে দিয়েছিলাম। তবে সেটা ছিল আমার তোলা একটা সেলফি 😛
যাইহোক মামাদের হাত থেকে রেহাই পাবার পর শুরু হল বৃষ্টির বিপত্তি। মুষলধারে বৃষ্টি নামল।ভয় হতে থাকল, বৃষ্টি র চক্বরে আমার ট্রিপ টাই না ভেস্তে যায়। ফোন করলাম অনিশকে। বলল আধ ঘন্টার মধ্যে চলে আসবে ও। বৃষ্টি থামার ও অনিশের আশার অপেক্ষা করতে থাকলাম স্টেশনে বসে। এর‌ই মাঝে প্রথমবার সামনাসামনি দর্শন হল টয়ট্রেনের।
সকাল ৯:০৫ -
অনিশ হাজির। বৃষ্টিও থেমে গেছে। শুরু করলাম আমাদের জার্নি। অনিশ এর আগে সেভক গেলেও কালিঝোড়া তার যাওয়া হয়নি। যাইহোক আমরা প্রথমে গেলাম শিলিগুড়ি বাসস্ট্যান্ডে। জানা গেল কালিম্পং যাবার বাসগুলো কালিঝোড়া হয়েই যায় এবং ১০:২৫ এ আছে কালিম্পং যাবার একটি বাস। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। এতটা সময় নষ্ট করার মনোবাসনা আমাদের বিন্দুমাত্রও ছিল না। অনিশের কথামতো বাসস্ট্যান্ড থেকে দশ মিনিটের হাঁটাপথের দূরত্বে আমরা গেলাম একটি অটো স্ট্যান্ডে। সেখান থেকে ট্রেকারে করে গেলাম আর একটি বাস স্ট্যান্ডে যার নাম পি সি মিত্তল মেমোরিয়াল বাস টার্মিনাস। ওখান থেকে উঠলাম সেভক যাবার একটি বাসে। আমার প্ল্যান ছিল আমরা ব্রেক জার্নি করে প্রথমে যাব সেভক। তারপর সেখান থেকে যাব কালিঝোড়া।
সকাল ১০:২৫ -
পৌছালাম সেভক। বাস থেকে নেমে কোরোনেশন ব্রিজের ওপর থেকে প্রকৃতির যে রূপ আমি দেখলাম তার লিখে বর্ণনা করা আমার পক্ষে অসম্ভব। এত সুন্দর লাগছিল সেভক পাহাড় ও তার নীচে দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীকে যে কিছুক্ষণের জন্য হলেও কমলা ফলস্ ঘুরতে যাওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। এর‌ই মাঝে দেখা হল এক ভ্রমণপ্রিয় মানুষের সাথে। মিজানুর রহমান। কাজের সূত্রে তিনি এখন থাকেন নর্থ বেঙ্গল‌ই। সপ্তাহান্তে ছুটি পেয়ে একাই বেড়িয়ে পড়েছিলেন সেভক ঘুরতে। অনিশের থেকে যখন জানলেন যে আমিও ঘুরতে এসেছি এখানে তখন তিনিও ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন একসাথে ঘোরার ব্যাপারে। আমরা তো এককথায় রাজি। একজন ভ্রমণসঙ্গী বাড়ল। আমরা ঠিক করলাম গাড়ি নয়, হাঁটাপথেই পেরোবো সেভক থেকে কালিঝোড়ার দূরত্ব। কারণ গাড়িতে বসে প্রকৃতির এই রূপ ও পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটার এই সুবর্ণ সুযোগ আমরা মিস করতে চাইনি।
সকাল ১০:২৫ থেকে দুপুর ১২:২০ -
দেড় ঘন্টার এই সফরটি আমি কোনোদিনও ভুলতে পারব না। পাহাড়ি ঝর্ণা, সেভক পাহাড়, তিস্তা নদী, আঁকা বাঁকা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে হাঁটা সব‌ই আমার কাছে কেমন যেন স্বপ্নের মতো লাগছিল। সাথে বাড়তি পাওনা ছিল অনিশ ও মিজানুর দার মতো দুজন সঙ্গী।
দুপুর ১২:২০ -
পৌছালাম কালিঝোড়া ব্রিজ। সকাল থেকে কারুর‌ই তেমন কিছু খাওয়া হয়নি। এবং সেভক থেকে কালিঝোড়ার মাঝে কোনো খাবারের দোকান‌ও আমাদের চোখে পড়েনি। কালিঝোড়া ব্রিজের কাছে আমরা পেলাম পাশাপাশি কয়েকটি দোকানের দেখা। অবশ্য কোনো দোকানেই ভাত বা রুটি পাইনি। থাকার মধ্যে একটি দোকানে মোমো পাওয়া গেলেও তৈরি করা ছিল না। তৈরি করতে অনেকটা সময় লাগবে জেনে আমরা মোমো খাওয়ার বাসনা ত্যাগ করে চা আর বিস্কুট খেয়েই পেট ভরালাম।
এবার মিজানুর দাকে বিদায় জানাবার পালা। বিকেলে ট্রেন থাকার দরুন ইচ্ছা থাকলেও কমলা ফলস্ দেখতে যাওয়া সম্ভবপর ছিল না দাদার পক্ষে। অগত্যা মিজানুর দাকে বিদায় জানিয়ে আমি আর অনিশ‌ই র‌ওনা দিলাম কমলা ফলসে্র উদ্দ্যেশ্যে। তবে রাস্তা আমাদের চেনা ছিল না। কয়েকজন কে জিজ্ঞাসা করেও বক্সিঝোড়া (কমলা ফলসে্র স্থানীয় নাম) কীভাবে পৌছাব তার হদিস পেলাম না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর‌ও যখন কমলা ফলস্ যাওয়ার রাস্তা খুঁজে পেলাম না তখন একটি জায়গার RESTRICTED AREA লেখা একটা বোর্ড চোখে পড়ল। কমলা ফলস্ না পাওয়ায় হতাশা ভুলতে আমরা এই জায়গাটিকেই বাছলাম। এবং সত্যি বলতে জায়গাটির ভেতরে ঢোকার পর আমাদের হতাশা পুরো মাত্রায় কেটে গেছিল। ছবি ও ভিডিও দেখলে কিছুটা আন্দাজ করতে পারবেন আপনারা যে কেন আমরা হতাশ হয়নি।
সময় ২:৫০ -
অনেকটা সময় RESTRICTED AREA তে কাটানোর পর এবার ফেরার পালা। ঠিক করলাম বাসের জন্য অপেক্ষা না করে হেঁটেই যাব সেভক পর্যন্ত। সেই মতো র‌ওনা‌ও দিলাম। কিন্তু কিছুটা পথ এগোনোর পর দেখা মিলল কিছু গুন্ডা টাইপের বানরের। যার মধ্যে একটি আবার আমাদের পিছু করতে শুরু করল। এবং আমরাও বাধ্য হয়ে পিছু হটতে থাকলাম। অনিশের মুখে শুনলাম এই বানর গুলো হাতে থাকা জিনিস কেড়ে নিতে সিদ্ধহস্ত। তাই আমাকে আমার ক্যামেরা ব্যাগে ভরে রাখতে হল এবং পিছু করা বানরটির হাত থেকে বাঁচার জন্য আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌছালাম যে সেভক পর্যন্ত বাকিটা পথ বাসেই যাব। আর সেইমতো একটি বাস পেয়ে আমরা উঠেও পড়লাম।
দুপুর ৩:৩০ -
পৌছালাম সেভক। কমলা ফলস্ দেখতে যাবার চক্করে সেভক ঠিক মতো ঘোরাই হয়নি আমার। তাই স্টেশন ফেরার আগে কিছুক্ষণের জন্য সেভক ঘোরা শুরু করলাম। সেভকের প্রধান আকর্ষণ কোরোনেশন ব্রিজ বা সেভক ব্রিজ। স্থানীয় মানুষের কাছে অবশ্য এটি বাঘপুল নামে বেশি জনপ্রিয়। এছাড়াও এখানে পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে সেভকেশ্বরী কালী ও আর‌ও একটি মন্দির। মন্দিরে উঠতে হবে জুতো খুলে মন্দিরের পাশে একটি জায়গায় জমা দিয়ে। আর তার জন্য খরচ করতে হবে ১০ টাকা।আমরা কোনো মন্দিরেই উঠিনি।
দুপুর ৩:৫৫ -
স্টেশনের উদ্দ্যেশ্যে বাসে উঠলাম। যেতে ইচ্ছা করছিল না। কিন্তু কিছু করার নেই। ফিরতে হবেই সেই দমবন্ধ করা পরিবেশের মধ্যে। শুধু কয়েক ঘন্টার এই সফরটি একটা সুন্দর স্মৃতি হিসেবে সারাজীবন মনে থেকে যাবে আমার। আমার প্রথম পাহাড় দেখা। আমার প্রথম উত্তরবঙ্গ দর্শন।
সত্যি, মিলন হলো এতদিনে।

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন
শিলিগুড়ি জংশন 
মহানন্দা নদী

সেভক পাহাড় ও তিস্তা নদী ১

সেভক পাহাড় ও তিস্তা নদী ২

কোরোনেশন ব্রিজ, সেভক

সেভকেশ্বরী মন্দির, সেভক

মন্দির নং ২, সেভক

সেভক পাহাড় ১

সেভক পাহাড় ২

সেভক পাহাড় ৩

পাহাড়ি ঝর্ণা ১
কালিঝোড়া যাওয়ার পথে

সেভক পাহাড় ও তিস্তা নদী (প্যানোরামা ভি‌উ) ৩

সেভক পাহাড় ও তিস্তা নদী ৪

পাহাড়ি ঝর্ণা ২
কালিঝোড়া যাওয়ার পথে

পাহাড়ি ঝর্ণা ৩
কালিঝোড়া যাওয়ার পথে

কালিঝোড়া ড্যাম ১

কালিঝোড়া ড্যাম ২

কালিঝোড়া ড্যাম ৩

কালিঝোড়া

কালিঝোড়া ব্রিজের ওপর থেকে তোলা তিস্তা নদীর ছবি।

পাহাড়ি রাস্তা
কালিঝোড়া

RESTRICTED AREA র ভিতরে। এই পথ দিয়েই যাওয়া যায় কমলা ফলস্।

RESTRICTED AREA র ভিতরে ২ 

RESTRICTED AREA র ভিতরে ৩

RESTRICTED AREA র ভিতরে ৪

RESTRICTED AREA র ভিতরে ৫


Photography AKC
DATE : 29.07.2018

Thursday 26 July 2018

Friday 6 July 2018

দিগসুই ও পাকড়ী গ্ৰাম (DIGSUI & PAKRI VILLAGE)

দিগসুই ও পাকড়ী গ্ৰাম (DIGSUI & PAKRI VILLAGE)

হুগলি জেলার মগরা থানার অন্তর্গত প্রাচীনতম গ্ৰামগুলির মধ্যে দিগসুই অন্যতম। কিছুটা চেনা আর অনেকটা অচেনা দিগসুই মূলত ব্রাহ্মন পন্ডিত অধ্যুষিত গ্ৰাম।

দিগসুই গ্ৰামে প্রবেশের পথ ধরে সোজা এগোলে প্রথমেই দেখা মিলবে দুশো বছরের‌ও পুরোনো একটি পারিবারিক শিবমন্দিরের। এই মন্দিরটি প্রাক্তন জমিদারদ্বয় ঁনরেন্দ্রনাথ ও ঁসত্যেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এর বর্তমান বংশধরগণ কর্তৃক ১৪১৭ বঙ্গাব্দে (২০১০ খ্রিঃ) পুনর্নির্মিত হয়েছে বলে জানা যায় মন্দিরের একটি প্রস্তর ফলক থেকে।

এছাড়া এই গ্ৰামে সাধনা সাহিত্য কুটির (Govt. Sponsored Rural Library) নামে একটি পাঠাগার আছে যেটি স্থাপিত হয় ১৩২৩ বঙ্গাব্দে (১৯১৭ খ্রিঃ)।

পাঠাগার পেরিয়ে একটু এগোলেই পরবে দিগসুই সাধন সমিতি। এটি একটি জনহিতকর প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি এই গ্ৰামের জনগণের জন্য কল্যাণমূলক কাজকর্ম করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানটির মূল মন্ত্র :                                   জীবে প্রেম দীনে দয়া ভক্তি ভগবানে।
 সকলের সার ধর্ম রাখিও স্মরণে।

দিগসুই সাধন সমিতির প্রতিষ্ঠা বাঃ ১৩২০ সালে। বাঃ ১৩৬৫ সালে সাধন সমিতির প্রাঙ্গণে একটি রামমন্দিরের স্থাপনা করা হয়। এই মন্দিরের একটি প্রস্তর ফলকে মন্দির ও সাধন সমিতির জন্ম ও কর্ম সম্পর্কে সংক্ষেপে যা বলা হয়েছে তা হল :
যবে শ্রীওঙ্কারনাথ সীতারামদাস
সমৌন করিয়েছিলো নীলাচলে বাস।
এই মন্দিরের শুভ কল্পনা তখন
তাহার অন্তর মাঝে লভে জাগরণ।
তেরশ পয়ষট্টি সনে মকরাকদিনে
শ্রীরাম লক্ষণ সীতা হনূমান্ সনে
স্থাপিলেন এ মন্দির দাশরথিদাস।
সংগ্ৰহ করিয়া যত্নে লিপিগ্ৰন্থ সনে
একশ পঁচিশ কোটি রামনামধনে।
দিগসুই সাধন সভা পবিত্র প্রাঙ্গণে
স্থাপন করিলা এই মন্দির ভবনে।
এই তীর্থে ভক্তগণ হ‌ইয়া মিলিত
ধন্য হক্ নিজ হিত করিয়া সঞ্চিত।

ধর্মসাধক দাশরথি দেব ছিলেন সাধন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক। তাঁর বহু শিষ্য ছিল এবং তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন হুগলির শ্রেষ্ঠ সাধক শ্রীসীতারামদাস ওঙ্কারনাথদাশরথি দেবের জন্ম দিগসুই গ্ৰামে ২৪ ফাল্গুন,১২৯১ সালে এবং মৃত্যু ৩১ ভাদ্র,১৩৩৯ সালে। দাশরথি দেব সম্পর্কে সুধীর কুমার মিত্র মহাশয়ের লেখা " হুগলি জেলার ইতিহাস " গ্ৰন্থ থেকে যা যানা যায় তা নিম্নে দেয়া হল :
"দাশরথি দেব সংস্কারপন্থী ছিলেন না বলিয়া তাঁহার নাম স্থানীয় কয়েকটি গ্ৰামের গন্ডী ছাড়াইয়া বাহিরে বিশেষ প্রচারিত হয় নাই। প্রাচীনকালের কূপমন্ডকতাকে তিনি শাস্ত্রীয় ঞ্জানের অভাবে সনাতনপন্থা বলিয়া ঞ্জান করিতেন এবং অব্রাক্ষণদের কোনরূপ সংস্কার কখন‌ও অনুমোদন করিতেন না‌। এই সম্বন্ধে শ্রীসীতারামদাস ওঙ্কারনাথ যাহা বলিয়াছেন তাহা হ‌ইতেই সমস্ত বুঝা যাইবে। তিনি লিখিয়াছেন :
"আমার গুরুদেব সনাতনপন্থী ছিলেন। কায়স্থ, উগ্ৰ, ক্ষত্রিয়, মাহিষ্য প্রভৃতি জাতীয়গণের অশৌচ সঙ্কোচ অনুমোদন করিতেন না, আমি যদি অশাস্ত্রীয় ১২ দিন অশৌচ পালন-কারীগণকে শিষ্য বলে গ্ৰহণ করি তাহলে আমার গুরুত্যাগ করা হবে।"
--- স্তবকুসুমাঞ্জলী "

সাধন সমিতির প্রাঙ্গণে স্থাপিত রামমন্দিরের চারকোণের চারটি বড়ো আলমারিতে খাতায় লিপিবদ্ধ একশো পঁচিশ কোটি 'রামনাম' রোজ পূজো করা হয়। এইরকম রামনাম পূজো ভারতের আর কোথাও হয় বলে জানা যায় না।

এছাড়া দিগসুই সাধন সমিতির অপর প্রান্তেই আছে দিগসুই সাধনা বঙ্গ বিদ্যালয় (উঃ মাঃ) ও দিগসুই প্রাথমিক বিদ্যালয়।১৯৩২ সালে দিগসুই সাধন সমিতি কর্তৃক স্থাপিত এই বিদ্যালয় এই প্রতিষ্ঠানের জনকল্যাণমূলক কাজের অন্যতম প্রধান সাক্ষী।

বিদ্যালয় ও সাধন সমিতির পথ ধরে আর‌ও কিছুটা এগোলে সামনে পড়বে একটি পঞ্চরত্ন মন্দির। মন্দিরের একটি প্রস্তর ফলক থেকে জানা যায় ' বাঃ ১৩৯১ সালের শ্রাবণ মাসে অনন্ত শ্রীশ্রীসীতারামদাস-ওঙ্কারনাথ মহারাজের কৃপাধন্য সনাতন বাস্তুশিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এর পুনঃ সংস্কার করা হয়েছে।'
অপর একটি ফলকে যা লেখা আছে তা নিম্নে দেয়া হলো :
'রথযাত্রা ৫/৩/১৩৭৩ সালে এই মন্দিরটি অনন্ত শ্রী সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ মহারাজ কর্তৃক সংস্কৃত।'

এই মন্দিরের ঠিক উল্টো দিকেই আছে ১২০০ বঙ্গাব্দে স্থাপিত দিগসুই শিবতলা বারোয়ারী

দিগসুই গ্ৰামের অন্যতম দর্শনীয় বস্তু ছিল সুরবংশের কুলদেবতা যাদব রাই জীউ-এর নবরত্ন মন্দিরসুধীর কুমার মিত্র মহাশয় এই মন্দিরের উল্লেখ করে 'হুগলি জেলার ইতিহাস' গ্ৰন্থে লিখেছিলেন "নয়টি চূড়া বিশিষ্ট এইরূপ বিরাট মন্দির বাকসা ব্যাতীত আর কোথাও দেখা যায় না। মন্দিরের সামনের দুইটি ইটের কারুকার্যখচিত স্তম্ভ বর্তমানে পড়িয়া গিয়াছে, ইহা ছাড়া মন্দিরের অন্যান্য স্থানের বিশেষ কিছু ক্ষতি নাই, মন্দিরটি সংরক্ষণ করা একান্ত কর্তব্য।"
সুধীর কুমার মিত্র মহাশয়ের বর্ণিত নয়চূড়া বিশিষ্ট মন্দিরটি এখন অতীত। সংরক্ষণের অভাবেই নবরত্ন এই মন্দিরটি আস্তে আস্তে ভেঙ্গে পড়ে সেটা। কিন্তু ঠিক কত বছর আগে এই মন্দিরটি ভেঙ্গে পড়েছিল সে সম্পর্কে বেশিরভাগ এলাকাবাসীর কিছুই জানা নেই। তবে যে কজনের থেকে মন্দিরের পতন সম্পর্কে তথ্য পাই তা থেকে জানা যায় মন্দিরটি আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে ভেঙ্গে পড়ে। বর্তমানে সুরবংশের কুলদেবতা যাদব রাই জীউ এর বিগ্ৰহ ছাদবিশিষ্ট নতুন একটি মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত আছে। নতুন এই মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। তবে মন্দিরের একটি প্রস্তর ফলকে যা খোদাই করা আছে তা নিম্নে দেয়া হলো :
শ্রীকৃষ্ণ শকাব্দ ১৭১৪
বেদৈক সপ্তে কামতে শকাব্দে।
শ্রী রাধায়ায়াদ বরায়কস্য।
রাসায়-রম্য- নবরত্ন  কুঞ্জ।
শ্রীরামাকান্ত-কৃত বিভাতি।
সন ১১৯৯ সাল গঠন : শ্রী নারায়ণমেস্ত্রী।

ফলক থেকে জানা যায় নারায়ণ মিস্ত্রী এই মন্দির গঠন করেছিলেন।
(এ বিষয়ে উল্লখ্য যে নারায়ণ মিস্ত্রী কর্তৃক গঠিত মন্দির বলতে নবরত্ন মন্দিরের কথাই বলা হয়েছে।যা বর্তমানে লুপ্ত।)

এইসব ছাড়াও এই গ্ৰামে আর‌ও কয়েকটি মন্দির আছে যার মধ্যে অন্যতম বিশালক্ষী মাতার মন্দির। এছাড়া এই গ্ৰামে ঢোকার পরেই ডানদিকে একটি ছোটো মাঠে দেখতে পাওয়া যায় আধভাঙ্গা ছাদবিহীন পাঁচিল ঘেরা বেদী। এই বেদীতে দূর্গা পূজার সময় বেশ বড়ো করে দূর্গা পূজো হয় বলে জানতে পারা যায় এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে।


দিগসুই গ্ৰাম পেরিয়ে পাকড়ী গ্ৰামে প্রবেশ করলে প্রথমেই পড়বে দাশরথিদেব যোগেশ্বর সরস্বতী শিশু মন্দির (স্থাপিত ২০১২) এবং এই গ্রামের অন্যতম বিখ্যাত কালী মন্দির "সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির।" মন্দির সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা যায়নি।তবে এই মন্দির চত্বরে আছে সোমেশ্বর জীউ নামের একটি মন্দির। মন্দিরের একটি ফলক থেকে জানা যায় এই মন্দিরটি সন ১৩০২ সালে শ্রীব্রজ লালগোপ দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল।



যাতায়াত :
হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে বর্ধমান বা মেমারী লোকালে উঠে নামুন তালান্ডু রেল স্টেশন। স্টেশন চত্বরের বাইরে থেকে দিগসুই যাওয়ার অটোরিকশা আছে। তালান্ডু রেল স্টেশন থেকে দিগসুই এর দুরত্ব ৪ কিমি মতো।

৩৭৮২৩ হাওড়া - বর্ধমান লোকাল

তালান্ডু রেলওয়ে স্টেশন ১

তালান্ডু রেলওয়ে স্টেশন ২

দিগসুই যাওয়ার পথে ১
তালান্ডু


দিগসুই যাওয়ার পথে ২
তালান্ডু

দিগসুই যাওয়ার পথে ৩
তালান্ডু

দিগসুই যাওয়ার পথে ৪
তালান্ডু

দিগসুই যাওয়ার পথে ৫
তালান্ডু

ফতেপুর, গ্র্যান্ড ট্যাঙ্ক রোড
দিগসুই এখান থেকে আর মাত্র ৩ কিমি।
ফতেপুর, গ্র্যান্ড ট্যাঙ্ক রোড

এখান থেকে বাঁ দিকে যেতে হবে।
ফতেপুর, গ্র্যান্ড ট্যাঙ্ক রোড

সাঁওতাল বিদ্রোহের দুই আদিবাসী বীর সিদু ও কানু মুরমু-র মূর্তি।
ফতেপুর, গ্র্যান্ড ট্যাঙ্ক রোড
দিগসুই যাওয়ার পথে ১
ফতেপুর
দিগসুই যাওয়ার পথে ২
ফতেপুর
দিগসুই যাওয়ার পথে ৩
ফতেপুর
দিগসুই যাওয়ার পথে ৪
ফতেপুর
দিগসুই যাওয়ার পথে ৫
ফতেপুর
দিগসুই যাওয়ার পথে ৬
ফতেপুর
যেতে হবে বাঁদিকে
ফতেপুর
মোচ পুকুর ১
মামুদপুর
মোচ পুকুর ২
মামুদপুর
দিগসুই যাওয়ার পথে ১
মামুদপুর
দিগসুই এখান থেকে আর মাত্র ১ কিমি
মামুদপুর
দিগসুই যাওয়ার পথে একটি সেতু
মামুদপুর
২০০ বছর পুরনো শিব মন্দির
দিগসুই
প্রস্তর ফলক
২০০ বছর পুরনো শিব মন্দির
দিগসুই
সাধনা সাহিত্য কুটির
দিগসুই সাধন সমিতি ১
দিগসুই সাধন সমিতি ২
দিগসুই সাধন সমিতি ৩
দিগসুই সাধন সমিতি ৪
প্রস্তর ফলক ১
দিগসুই সাধন সমিতি ৫
প্রস্তর ফলক ২
দিগসুই সাধন সমিতি ৬
দিগসুই সাধন সমিতি ৭
বাঁদিকে সাধন সমিতি ও ডানদিকে বিদ্যালয়
দিগসুই সাধনা বঙ্গ বিদ্যালয়
দিগসুই প্রাথমিক বিদ্যালয়
পঞ্চরত্ন মন্দির
প্রস্তর ফলক ১
পঞ্চরত্ন মন্দির
প্রস্তর ফলক ২
পঞ্চরত্ন মন্দির
দিগসুই শিবতলা বারোয়ারী
যাদব রাই জীউ এর মন্দির
প্রস্তর ফলক
যাদব রাই জীউ এর মন্দির
বিশালক্ষী মাতার মন্দির
বেদী
দিগসুই পেরিয়ে পাকড়ীর পথে
দাশরথিদেব যোগেশ্বর সরস্বতী শিশু মন্দির ১
পাকড়ী
দাশরথিদেব যোগেশ্বর সরস্বতী শিশু মন্দির ২
পাকড়ী


সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির ১
পাকড়ী
সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির ২
পাকড়ী
মন্দির চুড়া
সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির ৩
পাকড়ী
সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির ৪
পাকড়ী
সোমেশ্বর জীউ মন্দির ১
সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির চত্বর
পাকড়ী
সোমেশ্বর জীউ মন্দির ২
সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির চত্বর
পাকড়ী

সোমেশ্বর জীউ মন্দির ৩
সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির চত্বর
পাকড়ী
ফেরার পথে ১
দিগসুই
ফেরার পথে ২
দিগসুই
ফেরার পথে ১
ফতেপুর
ফেরার পথে ২
ফতেপুর
ফেরার পথে ৩
ফতেপুর
ফেরার পথে ৪
ফতেপুর


তথ্য :
১. হুগলি জেলার ইতিহাস (সুধীর কুমার মিত্র)
২. গুগল ম্যাপ
৩. উইকিপিডিয়া

Photography AKC
DATE : 03.07.2018

Sevoke & Kalijhora । Top 2 places visit in Siliguri,West Bengal । TRAVEL...

My Fourth YouTube and First Travel Video.....Pls Pls Pls SUBSCRIBE to my channel and hit the BELL icon to stay notified.....Hope you like...

BLOG ITEMS