কমলাকান্ত কালীবাড়ি, বোরহাট
পূর্ব বর্ধমান জেলার বোরহাটের কমলাকান্ত কালীবাড়ি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি কালীমন্দির। বলা হয় বর্ধমানের বোরহাট পরিচিত সাধক কমলাকান্তের সাধনার ক্ষেত্র হিসেবে। এই মন্দিরেই নাকি সিদ্ধিলাভ করেছিলেন তিনি। সাধক কমলাকান্ত ওরফে কমলাকান্ত ভট্টাচার্য (১৭৬৯ - ১৮২১ খ্রিঃ) মহোদয়ের জন্ম পূর্ব বর্ধমান জেলার KHANO পঞ্চায়েত এলাকার GALSI - 2 ব্লকের চান্না গ্রামে। জানা যায়, মহারাজ তেজচাঁদ মহতাব তাঁকে বর্ধমানে নিয়ে আসেন এবং তাঁর উচ্ছৃঙ্খল পুত্র প্রতাপচন্দ্রকে শিক্ষা দীক্ষায় উপযুক্ত করে তোলার দায়িত্ব দেন। এরজন্য মহারাজ লাকুড্ডিতে একটি বাড়ি আর কোটালহাটে একটি মন্দির তৈরি করে দেন। এই মন্দিরেই সাধক কমলাকান্ত কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পঞ্চমুণ্ডীর আসনে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন বলে জানা যায়।
মন্দিরের ইতিহাস জানায়, ১২১৬ বঙ্গাব্দে সাধক কমলাকান্ত এখানে মায়ের পুজো শুরু করেছিলেন। এই সাধকের ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পরও যেন তাঁকে মায়ের চরণতলে রেখে দেওয়া হয়। সেই ইচ্ছা অনুযায়ীই তাঁর সমাধির উপরই প্রতিষ্ঠা করা হয় মায়ের মূর্তি ও মন্দির। সমাধির উপরে দেবীর প্রতিষ্ঠা করে মন্দিরের নজির গোটা ভারতে কমই আছে। এছাড়াও শোনা যায় সাধক কমলাকান্ত নাকি জানিয়েছিলেন মৃত্যুর পর তাঁকে যেন গঙ্গায় না দেওয়া হয়। এবং কথিত আছে মা গঙ্গা নিজেই তাঁর কাছে এসেছিলেন। মাটি ফুঁড়ে গঙ্গাজল বেরিয়েছিল। সেই জায়গাটিতে কুয়ো বাঁধানো হয়। দেবীর পুজো এখানে গঙ্গাজল নয়, ওই কুয়োর জলেই হয়। সাধক কমলাকান্ত কালী মাকে মাগুর মাছের ভোগ খাওয়াতেন। সেই রীতি মেনে আজও এই দেবীকে প্রতি অমাবস্যায় জ্যান্ত মাগুরের ভোগ দেওয়া হয়।
সাধক কমলাকান্তকে নিয়ে অনেক ঘটনা মানুষের মুখে শোনা যায়। এই মন্দিরের মা কালী যে জীবন্ত, তার প্রমাণ নাকি বর্ধমানের মহারাজাকে দিয়েছিলেন কমলাকান্ত। বেলকাঁটা দিয়ে মায়ের পা ফুটিয়ে রক্ত বের করে তিনি মহারাজকে দেখিয়েছিলেন এই দেবী জীবন্ত। ঘোর অমানিশায় বর্ধমানের আকাশে মহারাজকে পূর্ণিমার চাঁদ দর্শন করিয়েছিলেন এই সাধক। এরকম আরো অনেক কাহিনী শোনা যায়।
(সাধক কমলাকান্তের জন্ম ও মৃত্যুর সাল সম্পর্কে এক এক জায়গায় এক এক রকম দেওয়া আছে। কিছু জায়গায় দেখা যায় তার জন্মসাল ১৭৭২ থেকে ১৮২০। আবার কিছু জায়গায় বিশেষত উইকিপিডিয়া তে দেওয়া আছে ১৭৬৯ থেকে ১৮২১। আমি এক্ষেত্রে উইকিপিডিয়ার টাই দিলাম। আর দুপুরে মন্দির বন্ধ থাকার দরুন বিশেষ ছবি তোলা যায়নি।)
No comments:
Post a Comment