Friday 6 July 2018

দিগসুই ও পাকড়ী গ্ৰাম (DIGSUI & PAKRI VILLAGE)

দিগসুই ও পাকড়ী গ্ৰাম (DIGSUI & PAKRI VILLAGE)

হুগলি জেলার মগরা থানার অন্তর্গত প্রাচীনতম গ্ৰামগুলির মধ্যে দিগসুই অন্যতম। কিছুটা চেনা আর অনেকটা অচেনা দিগসুই মূলত ব্রাহ্মন পন্ডিত অধ্যুষিত গ্ৰাম।

দিগসুই গ্ৰামে প্রবেশের পথ ধরে সোজা এগোলে প্রথমেই দেখা মিলবে দুশো বছরের‌ও পুরোনো একটি পারিবারিক শিবমন্দিরের। এই মন্দিরটি প্রাক্তন জমিদারদ্বয় ঁনরেন্দ্রনাথ ও ঁসত্যেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এর বর্তমান বংশধরগণ কর্তৃক ১৪১৭ বঙ্গাব্দে (২০১০ খ্রিঃ) পুনর্নির্মিত হয়েছে বলে জানা যায় মন্দিরের একটি প্রস্তর ফলক থেকে।

এছাড়া এই গ্ৰামে সাধনা সাহিত্য কুটির (Govt. Sponsored Rural Library) নামে একটি পাঠাগার আছে যেটি স্থাপিত হয় ১৩২৩ বঙ্গাব্দে (১৯১৭ খ্রিঃ)।

পাঠাগার পেরিয়ে একটু এগোলেই পরবে দিগসুই সাধন সমিতি। এটি একটি জনহিতকর প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি এই গ্ৰামের জনগণের জন্য কল্যাণমূলক কাজকর্ম করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানটির মূল মন্ত্র :                                   জীবে প্রেম দীনে দয়া ভক্তি ভগবানে।
 সকলের সার ধর্ম রাখিও স্মরণে।

দিগসুই সাধন সমিতির প্রতিষ্ঠা বাঃ ১৩২০ সালে। বাঃ ১৩৬৫ সালে সাধন সমিতির প্রাঙ্গণে একটি রামমন্দিরের স্থাপনা করা হয়। এই মন্দিরের একটি প্রস্তর ফলকে মন্দির ও সাধন সমিতির জন্ম ও কর্ম সম্পর্কে সংক্ষেপে যা বলা হয়েছে তা হল :
যবে শ্রীওঙ্কারনাথ সীতারামদাস
সমৌন করিয়েছিলো নীলাচলে বাস।
এই মন্দিরের শুভ কল্পনা তখন
তাহার অন্তর মাঝে লভে জাগরণ।
তেরশ পয়ষট্টি সনে মকরাকদিনে
শ্রীরাম লক্ষণ সীতা হনূমান্ সনে
স্থাপিলেন এ মন্দির দাশরথিদাস।
সংগ্ৰহ করিয়া যত্নে লিপিগ্ৰন্থ সনে
একশ পঁচিশ কোটি রামনামধনে।
দিগসুই সাধন সভা পবিত্র প্রাঙ্গণে
স্থাপন করিলা এই মন্দির ভবনে।
এই তীর্থে ভক্তগণ হ‌ইয়া মিলিত
ধন্য হক্ নিজ হিত করিয়া সঞ্চিত।

ধর্মসাধক দাশরথি দেব ছিলেন সাধন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক। তাঁর বহু শিষ্য ছিল এবং তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন হুগলির শ্রেষ্ঠ সাধক শ্রীসীতারামদাস ওঙ্কারনাথদাশরথি দেবের জন্ম দিগসুই গ্ৰামে ২৪ ফাল্গুন,১২৯১ সালে এবং মৃত্যু ৩১ ভাদ্র,১৩৩৯ সালে। দাশরথি দেব সম্পর্কে সুধীর কুমার মিত্র মহাশয়ের লেখা " হুগলি জেলার ইতিহাস " গ্ৰন্থ থেকে যা যানা যায় তা নিম্নে দেয়া হল :
"দাশরথি দেব সংস্কারপন্থী ছিলেন না বলিয়া তাঁহার নাম স্থানীয় কয়েকটি গ্ৰামের গন্ডী ছাড়াইয়া বাহিরে বিশেষ প্রচারিত হয় নাই। প্রাচীনকালের কূপমন্ডকতাকে তিনি শাস্ত্রীয় ঞ্জানের অভাবে সনাতনপন্থা বলিয়া ঞ্জান করিতেন এবং অব্রাক্ষণদের কোনরূপ সংস্কার কখন‌ও অনুমোদন করিতেন না‌। এই সম্বন্ধে শ্রীসীতারামদাস ওঙ্কারনাথ যাহা বলিয়াছেন তাহা হ‌ইতেই সমস্ত বুঝা যাইবে। তিনি লিখিয়াছেন :
"আমার গুরুদেব সনাতনপন্থী ছিলেন। কায়স্থ, উগ্ৰ, ক্ষত্রিয়, মাহিষ্য প্রভৃতি জাতীয়গণের অশৌচ সঙ্কোচ অনুমোদন করিতেন না, আমি যদি অশাস্ত্রীয় ১২ দিন অশৌচ পালন-কারীগণকে শিষ্য বলে গ্ৰহণ করি তাহলে আমার গুরুত্যাগ করা হবে।"
--- স্তবকুসুমাঞ্জলী "

সাধন সমিতির প্রাঙ্গণে স্থাপিত রামমন্দিরের চারকোণের চারটি বড়ো আলমারিতে খাতায় লিপিবদ্ধ একশো পঁচিশ কোটি 'রামনাম' রোজ পূজো করা হয়। এইরকম রামনাম পূজো ভারতের আর কোথাও হয় বলে জানা যায় না।

এছাড়া দিগসুই সাধন সমিতির অপর প্রান্তেই আছে দিগসুই সাধনা বঙ্গ বিদ্যালয় (উঃ মাঃ) ও দিগসুই প্রাথমিক বিদ্যালয়।১৯৩২ সালে দিগসুই সাধন সমিতি কর্তৃক স্থাপিত এই বিদ্যালয় এই প্রতিষ্ঠানের জনকল্যাণমূলক কাজের অন্যতম প্রধান সাক্ষী।

বিদ্যালয় ও সাধন সমিতির পথ ধরে আর‌ও কিছুটা এগোলে সামনে পড়বে একটি পঞ্চরত্ন মন্দির। মন্দিরের একটি প্রস্তর ফলক থেকে জানা যায় ' বাঃ ১৩৯১ সালের শ্রাবণ মাসে অনন্ত শ্রীশ্রীসীতারামদাস-ওঙ্কারনাথ মহারাজের কৃপাধন্য সনাতন বাস্তুশিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এর পুনঃ সংস্কার করা হয়েছে।'
অপর একটি ফলকে যা লেখা আছে তা নিম্নে দেয়া হলো :
'রথযাত্রা ৫/৩/১৩৭৩ সালে এই মন্দিরটি অনন্ত শ্রী সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ মহারাজ কর্তৃক সংস্কৃত।'

এই মন্দিরের ঠিক উল্টো দিকেই আছে ১২০০ বঙ্গাব্দে স্থাপিত দিগসুই শিবতলা বারোয়ারী

দিগসুই গ্ৰামের অন্যতম দর্শনীয় বস্তু ছিল সুরবংশের কুলদেবতা যাদব রাই জীউ-এর নবরত্ন মন্দিরসুধীর কুমার মিত্র মহাশয় এই মন্দিরের উল্লেখ করে 'হুগলি জেলার ইতিহাস' গ্ৰন্থে লিখেছিলেন "নয়টি চূড়া বিশিষ্ট এইরূপ বিরাট মন্দির বাকসা ব্যাতীত আর কোথাও দেখা যায় না। মন্দিরের সামনের দুইটি ইটের কারুকার্যখচিত স্তম্ভ বর্তমানে পড়িয়া গিয়াছে, ইহা ছাড়া মন্দিরের অন্যান্য স্থানের বিশেষ কিছু ক্ষতি নাই, মন্দিরটি সংরক্ষণ করা একান্ত কর্তব্য।"
সুধীর কুমার মিত্র মহাশয়ের বর্ণিত নয়চূড়া বিশিষ্ট মন্দিরটি এখন অতীত। সংরক্ষণের অভাবেই নবরত্ন এই মন্দিরটি আস্তে আস্তে ভেঙ্গে পড়ে সেটা। কিন্তু ঠিক কত বছর আগে এই মন্দিরটি ভেঙ্গে পড়েছিল সে সম্পর্কে বেশিরভাগ এলাকাবাসীর কিছুই জানা নেই। তবে যে কজনের থেকে মন্দিরের পতন সম্পর্কে তথ্য পাই তা থেকে জানা যায় মন্দিরটি আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে ভেঙ্গে পড়ে। বর্তমানে সুরবংশের কুলদেবতা যাদব রাই জীউ এর বিগ্ৰহ ছাদবিশিষ্ট নতুন একটি মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত আছে। নতুন এই মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। তবে মন্দিরের একটি প্রস্তর ফলকে যা খোদাই করা আছে তা নিম্নে দেয়া হলো :
শ্রীকৃষ্ণ শকাব্দ ১৭১৪
বেদৈক সপ্তে কামতে শকাব্দে।
শ্রী রাধায়ায়াদ বরায়কস্য।
রাসায়-রম্য- নবরত্ন  কুঞ্জ।
শ্রীরামাকান্ত-কৃত বিভাতি।
সন ১১৯৯ সাল গঠন : শ্রী নারায়ণমেস্ত্রী।

ফলক থেকে জানা যায় নারায়ণ মিস্ত্রী এই মন্দির গঠন করেছিলেন।
(এ বিষয়ে উল্লখ্য যে নারায়ণ মিস্ত্রী কর্তৃক গঠিত মন্দির বলতে নবরত্ন মন্দিরের কথাই বলা হয়েছে।যা বর্তমানে লুপ্ত।)

এইসব ছাড়াও এই গ্ৰামে আর‌ও কয়েকটি মন্দির আছে যার মধ্যে অন্যতম বিশালক্ষী মাতার মন্দির। এছাড়া এই গ্ৰামে ঢোকার পরেই ডানদিকে একটি ছোটো মাঠে দেখতে পাওয়া যায় আধভাঙ্গা ছাদবিহীন পাঁচিল ঘেরা বেদী। এই বেদীতে দূর্গা পূজার সময় বেশ বড়ো করে দূর্গা পূজো হয় বলে জানতে পারা যায় এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে।


দিগসুই গ্ৰাম পেরিয়ে পাকড়ী গ্ৰামে প্রবেশ করলে প্রথমেই পড়বে দাশরথিদেব যোগেশ্বর সরস্বতী শিশু মন্দির (স্থাপিত ২০১২) এবং এই গ্রামের অন্যতম বিখ্যাত কালী মন্দির "সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির।" মন্দির সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা যায়নি।তবে এই মন্দির চত্বরে আছে সোমেশ্বর জীউ নামের একটি মন্দির। মন্দিরের একটি ফলক থেকে জানা যায় এই মন্দিরটি সন ১৩০২ সালে শ্রীব্রজ লালগোপ দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল।



যাতায়াত :
হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে বর্ধমান বা মেমারী লোকালে উঠে নামুন তালান্ডু রেল স্টেশন। স্টেশন চত্বরের বাইরে থেকে দিগসুই যাওয়ার অটোরিকশা আছে। তালান্ডু রেল স্টেশন থেকে দিগসুই এর দুরত্ব ৪ কিমি মতো।

৩৭৮২৩ হাওড়া - বর্ধমান লোকাল

তালান্ডু রেলওয়ে স্টেশন ১

তালান্ডু রেলওয়ে স্টেশন ২

দিগসুই যাওয়ার পথে ১
তালান্ডু


দিগসুই যাওয়ার পথে ২
তালান্ডু

দিগসুই যাওয়ার পথে ৩
তালান্ডু

দিগসুই যাওয়ার পথে ৪
তালান্ডু

দিগসুই যাওয়ার পথে ৫
তালান্ডু

ফতেপুর, গ্র্যান্ড ট্যাঙ্ক রোড
দিগসুই এখান থেকে আর মাত্র ৩ কিমি।
ফতেপুর, গ্র্যান্ড ট্যাঙ্ক রোড

এখান থেকে বাঁ দিকে যেতে হবে।
ফতেপুর, গ্র্যান্ড ট্যাঙ্ক রোড

সাঁওতাল বিদ্রোহের দুই আদিবাসী বীর সিদু ও কানু মুরমু-র মূর্তি।
ফতেপুর, গ্র্যান্ড ট্যাঙ্ক রোড
দিগসুই যাওয়ার পথে ১
ফতেপুর
দিগসুই যাওয়ার পথে ২
ফতেপুর
দিগসুই যাওয়ার পথে ৩
ফতেপুর
দিগসুই যাওয়ার পথে ৪
ফতেপুর
দিগসুই যাওয়ার পথে ৫
ফতেপুর
দিগসুই যাওয়ার পথে ৬
ফতেপুর
যেতে হবে বাঁদিকে
ফতেপুর
মোচ পুকুর ১
মামুদপুর
মোচ পুকুর ২
মামুদপুর
দিগসুই যাওয়ার পথে ১
মামুদপুর
দিগসুই এখান থেকে আর মাত্র ১ কিমি
মামুদপুর
দিগসুই যাওয়ার পথে একটি সেতু
মামুদপুর
২০০ বছর পুরনো শিব মন্দির
দিগসুই
প্রস্তর ফলক
২০০ বছর পুরনো শিব মন্দির
দিগসুই
সাধনা সাহিত্য কুটির
দিগসুই সাধন সমিতি ১
দিগসুই সাধন সমিতি ২
দিগসুই সাধন সমিতি ৩
দিগসুই সাধন সমিতি ৪
প্রস্তর ফলক ১
দিগসুই সাধন সমিতি ৫
প্রস্তর ফলক ২
দিগসুই সাধন সমিতি ৬
দিগসুই সাধন সমিতি ৭
বাঁদিকে সাধন সমিতি ও ডানদিকে বিদ্যালয়
দিগসুই সাধনা বঙ্গ বিদ্যালয়
দিগসুই প্রাথমিক বিদ্যালয়
পঞ্চরত্ন মন্দির
প্রস্তর ফলক ১
পঞ্চরত্ন মন্দির
প্রস্তর ফলক ২
পঞ্চরত্ন মন্দির
দিগসুই শিবতলা বারোয়ারী
যাদব রাই জীউ এর মন্দির
প্রস্তর ফলক
যাদব রাই জীউ এর মন্দির
বিশালক্ষী মাতার মন্দির
বেদী
দিগসুই পেরিয়ে পাকড়ীর পথে
দাশরথিদেব যোগেশ্বর সরস্বতী শিশু মন্দির ১
পাকড়ী
দাশরথিদেব যোগেশ্বর সরস্বতী শিশু মন্দির ২
পাকড়ী


সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির ১
পাকড়ী
সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির ২
পাকড়ী
মন্দির চুড়া
সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির ৩
পাকড়ী
সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির ৪
পাকড়ী
সোমেশ্বর জীউ মন্দির ১
সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির চত্বর
পাকড়ী
সোমেশ্বর জীউ মন্দির ২
সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির চত্বর
পাকড়ী

সোমেশ্বর জীউ মন্দির ৩
সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির চত্বর
পাকড়ী
ফেরার পথে ১
দিগসুই
ফেরার পথে ২
দিগসুই
ফেরার পথে ১
ফতেপুর
ফেরার পথে ২
ফতেপুর
ফেরার পথে ৩
ফতেপুর
ফেরার পথে ৪
ফতেপুর


তথ্য :
১. হুগলি জেলার ইতিহাস (সুধীর কুমার মিত্র)
২. গুগল ম্যাপ
৩. উইকিপিডিয়া

Photography AKC
DATE : 03.07.2018

1 comment:

  1. "দিগসুই গ্ৰামের অন্যতম দর্শনীয় বস্তু ছিল সুরবংশের কুলদেবতা যাদব রাই জীউ-এর নবরত্ন মন্দির।"
    এই মন্দির টি কোথায়? সঠিক ঠিকানা জানলে উপকৃত হব।

    ReplyDelete

Sevoke & Kalijhora । Top 2 places visit in Siliguri,West Bengal । TRAVEL...

My Fourth YouTube and First Travel Video.....Pls Pls Pls SUBSCRIBE to my channel and hit the BELL icon to stay notified.....Hope you like...

BLOG ITEMS